মাটি পরীক্ষা

ভবন নির্মাণের পূর্বে মাটি পরীক্ষা করা কেন প্রয়োজনীয়? এতে কী কী ধরনের পরীক্ষা করা হয় এবং সয়েল টেস্ট করার দ্বারা আমার কি লাভ?

মাটি পরীক্ষাঃ

মাটি পরীক্ষাঃ আমাদের দেশের কিছু কিছু মানুষ মনে করেন মাটি পরীক্ষার দরকার নেই। পাশের ভবন গুলো মাটি পরীক্ষা ছাড়াই করা হয়েছে, কাজেই আমার অংশেও অসুবিধা হবেনা। কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়। মাটি পরীক্ষা করতে বেশী খরচ হয় না। ৩/৫ কাঠায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে এটি করা সম্ভব। মাটি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার বাড়ীর সঠিক ফাউন্ডেশন নির্ধারণ করবেন। এতে যে ফাউন্ডেশন হবে তার চেয়ে হয়তো আপনি না জেনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভারী ফাউন্ডেশন করে ফেলতে পারেন তাতে অপচয় হবে। প্রয়োজনের তুলনায় হালকা ফাউন্ডেশন করলে বাড়ীর নিরাপত্তা নষ্ট হবে।

রাজমিস্ত্রিদের ভ্রান্ত ধারনা অগ্রহনযোগ্যঃ

রাজমিস্ত্রিরা নির্দিষ্ট এলাকায় অনেকগুলো বাড়ি নির্মাণের সাথে জড়িত থাকেন বলে ঐ এলাকার মাটির প্রকৃতি সম্বন্ধে তাদের একটা ভাল ধারণা তৈরি হয় বলে তারা মনে করেন। তারা মন্তব্য করেন অমুক এলাকায় পাইলিং লাগে না আবার ধানমন্ডিতে অবশ্যই পাইলিং লাগবে ইত্যাদি। রাজমিস্ত্রির পরামর্শ মত অনেকেই ভাবেন সয়েল টেষ্ট করে অকারণে টাকা খরচ করার চেয়ে পাশের বাড়ির ফাউন্ডেশন যেভাবে হয়েছে নিজের বাড়িটি সেভাবেই করি। কিন্তু এটা খুবই ক্ষতিকর চিন্তা ভাবনা । কারণ মাটির নিচে কি আছে তা মাটি পরীক্ষা না করে আমরা কোন ভাবেই জানতে পারবো না ।

পাইলিং করতে হবে কিনাঃ

অনেক প্লটে পাইলিং দরকার নেই কিন্তু আশপাশের সবাই পাইলিং করেছে তাদের দেখা দেখি পাইলিং করে এতে প্রচুর টাকার অপচয় হতে পারে। তাই বাড়ি নির্মাণ কাজ করার পূর্বে অবশ্যই সয়েল টেষ্ট করাতে হবে। পাশের প্লটের মাটি ভাল হলেও আপনার প্লটের মাটি তেমনটি হবে, এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। কেবলমাত্র নির্দিষ্ট প্লটের মাটি পরীক্ষা করেই বোঝা যাবে ঐ বাড়ীটিতে কোন ধরনের ফাউন্ডেশন ডিজাইন করা যাবে।

সাইট পরিদর্শনঃ

সয়েল টেষ্ট করার পূর্বে সাইট পরিদর্শন করা উচিৎ। এতে মাটির উপরি ভাগের অবস্থা সম্বন্ধে সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে এবং কিভাবে সয়েল টেষ্ট করা হবে ত নির্ধারণ করা যাবে। পাথুরে মাটি ফাউন্ডেশনের জন্য সবচাইতে ভাল। বালু এবং মুজি মাটি ফাউন্ডেশন সামগ্রী হিসেবে বেশ ভাল।

মাটি পরীক্ষার পূর্বে সাইটে গিয়ে যে সকল তথ্য সংগ্রহ করতে হবেঃ

  • এলাকার ভৌগলিক অবস্থা
  • গর্ত আছে কিনা
  • মাটি কেটে সরিয়ে নেয়া হয়েছে কিনা ।
  • ভূমি ধসের লক্ষণ আছে কিনা ।
  • আশপাশের পানির উচ্চতা (নদী কিংবা পুকুরের)।
  • পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ইত্যাদি ।

মাটি পরীক্ষার উদ্দেশ্য

  • সঠিক ফাউন্ডেশন ডিজাইন।
  • বাড়ির স্ট্রাকচারাল ডিজাইন।
  • নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ।
  • বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।
  • নির্মাণ পদ্ধতি নির্বাচন।

মাটি পরীক্ষার ধারা

  • সাইট/প্লট পরিদর্শন ও জরিপ করা।
  • ফিল্ডের অবস্থা অনুযায়ী বোরিং সংখ্যা ও স্থান নির্ধারণ করা এবং সেই অনুযায়ী বোরিং সম্পন্ন করা।
  • প্রয়োজন অনুযায়ী বোরিং গভীরতা নির্ণয় করা।
  • প্রত্যেক বোরিং গভীরতা নির্ণয় করা।
  • বোরিং বা ড্রিলিং এর সাহায্যে ৫ ফুট অন্তর মাটির এস.পি.টি (S.P.T) ভ্যালু নির্ণয় করা এবং মাটির নিরাপদ ভারবহন ক্ষমতা (সেফ বেয়ারিং ক্যাপাসিটি) বের করা।
  • ফিল্ড টেষ্ট এবং ল্যাব টেষ্টের ফলাফল বের করা।
  • মাটি পরীক্ষার চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করা এবং সেই অনুযায়ী বাড়ির ফাউন্ডেশন সম্পর্কে মন্তব্য করা।

মাটি পরীক্ষা করার কৌশলঃ

যে কোন ধরনের মাটিতেই ওয়াশ বোরিং পদ্ধতিতে সয়েল টেষ্ট করা যায়। প্রথমে মাটিতে একটি কেসিং লাগানো হয়। এরপর এই কেসিং এর ভেতরে ফাঁপা ড্রিল রড (যার মাথায় ধারালো মাটি কাটার বিট লাগানো থাকে) প্রবেশ করানো হয়। ফাঁকা ড্রিল রডের ভেতর দিয়ে পানি প্রবেশ করানো হয় এবং এটাকে ক্রমাগত উঠানো ও নামানো হয় এবং ঘোরানো হয়। পানির তোড়ে ও ঘোরানোর ফলে ভেতরের মাটি নরম হয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং পানির সাথে মিশে উপরে উঠে আসে। এভাবে আস্তে আস্তে নিচের দিকে যাওয়া হয় এবং নির্ধারিত দূরত্ব পরপর মাটির স্যাম্বল নেওয়া হয়। সাধারণত প্রতি কাঠার জন্য একটি করে বোরিং করা হয়।

মাটি পরীক্ষা করার কৌশল

মাটির নমুনা দুই ধরনের

আলোড়িত মাটি (Disturbed sample): আলোড়িত মাটি যে মাটির স্বাভাবিক গঠন আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে বদলে গেছে ও নষ্ট হয়ে গেছে ।

অনালোড়িত মাটি (undisturbed sample): যে মাটির স্বাভাবিক গঠন এবং ধর্ম অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষিত থাকে তাকে অনালোড়িত মাটি বলে। ফাউন্ডেশন ফুটিং ডিজাইন করার পূর্বে মাটির সেফ বেয়ারিং ক্যাপাসিটি জানা থাকতে হবে।

মাটির সেফ বেয়ারিং ক্যাপাসিটি যে সকল বিষয়ের উপর নির্ভর করেঃ
  • মাটির ধরন, প্রকৃতি এবং ভৌত ধর্মের উপর।
  • মাটির সেটেলম্যান্ট অবস্থার উপর।
  • মাটির নিচের ওয়াটার লেভেলের উপর।
  • বেয়ারিং ক্যাপসিটির উপর ফাউন্ডেশনের আকৃতি নির্ভর করে।
নরম মাটির বেয়ারিং ক্যাপাসিটি বাড়ানোর উপায়ঃ

প্রয়োজনে ফাউন্ডেশনের গভীরতা বাড়িয়ে। প্রয়োজনীয় মাটি খোঁড়ার পর দুরমুজ দ্বারা সংকোচন করে। প্রয়োজনে ইট, পাথরের টুকরা দুরমুজের সময় ঢুকাতে হবে। নরম মাটি সরিয়ে তা বালি দ্বারা পূর্ণ করে। প্রয়োজনে কাঠ বা কংক্রিট পাইলিং করে। ফাউন্ডেশনের তলায় অতিরিক্ত পানি থাকলে তা অপসারণ করতে হবে।

আপনি যদি আমাদের দক্ষ কনসালটেন্ট থেকে মাটি পরীক্ষা বা সয়েল টেস্ট করাতে চান তা হলে আজই যোগাযোগ করুন আমরা আপনাকে সূলভ মূল্যে সঠিক ভাবে মাটি পরীক্ষা করে দিতে পারবো ইনশাআল্লাহ্‌।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top