রিইনফোর্সমেন্ট (R.C.C) ঢালাই কাজের পূর্ব প্রস্তুতিঃ
বাড়ি তৈরির কাজে লক্ষ্যনীয় বিষয়ঃ বাড়ি তৈরির কাজে রিইনফোর্সমেন্ট (R.C.C) সম্পর্কে অধিকাংশ লোকেরই ধারনা আছে। তবে এই রিইনফোর্সমেন্ট কাজের গুরুত্ব দিক সম্পর্কে কয় জনে জানি বা খবর রাখি? অসচেতনার দরুণ ঘটে যেতে পারে অকল্পনীয় দুর্ঘটনা যার দ্বারা হয়ে যেতে পারে অসংখ্য লোকের প্রাণহানী এবং হতে পারে প্রচুর অর্থের অপচয়। আর সে কারনে আর.সি.সি (R.C.C) কাজে যে সকল বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন তা নিচে তুলে ধরা হল-
সাটারিং বা ফর্মওয়ার্ক চেক করতে হবেঃ
- সাটারিং এর সাপোর্ট ঠিক মত দেওয়া আছে কিনা এবং ঢালাই চলাকালিন সময় তা নড়ে বা ভেঙ্গে না যায়।
- কাঠের হলে ভেতরের দিকের তলা সমান বা স্মুথ আছে কিনা দেখতে হবে।
- কাঠের সাটার হলে জয়েন্টে পাতলা টিনের ফিতা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। এই পাতলা টিনের ফিতাকে লোকাল ভাষায় ময়ূরী বা রূব্বন সিট বলে।
- স্টিলের শাটারের জয়েন্টের মাঝে ফোম বা জুট টেপ দিতে হবে।
- সাটারিং এর এলাইনমেন্ট যথাযথ আছে কিনা তা চেক করতে হবে।
- সাটারিং এর মালামাল পরিষ্কার করা হয়েছে কিনা তা চেক করতে হবে।
- স্টিলের সাটারিং হলে এর তলায় তেলের ব্যবহার করা হয়েছে কিনা।
- কাজ চলাকালিন সাটারিং নড়ে বা ভেঙ্গে না যায় সে জন্য কাজের পূর্বে সাটারিং এর সাপোর্ট ঠিক মত আছে কিনা ভালভাবে চেক করে করতে হবে।
- সাটারিং এ কোন প্রকার ছিদ্র আছে কিনা তা চেক করতে হবে।
- ঢালাই চলাকালীন সময়ে নিচে থেকে অবিরত সেন্টারিং চেক করতে হবে।
আর সি সি কাজ চেক করতে হবে
- রডে কোন প্রকার মরিচা বা ক্রাক থাকা যাবে না।
- রড়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব বা তিনটি গ্যাপের মাপ নিয়ে চেক করতে হবে।
- ডিজাইন অনুসারে রড় বিছানো হয়েছে কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে।
- রড়ের পুরুত্ব বা ডায়া ঠিক আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে।
- এক রড হতে আরেক রডের দূরত্ব কমপক্ষে 1″ হতে হবে।
- মেইন রডের সেপারেটর বার ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তা দেখেতে হবে।
- বীমের রডে হুক বা মাটাম দেওয়া হয়েছে কিনা তা চেক করতে হবে।
- রডের ল্যাপ লেংথ ঠিক মত দেওয়া হয়েছে কিনা তা চেক করতে হবে।
- প্রতিটা পয়েন্টে G.I. তারের বাধন দেওয়া হয়েছে কিনা চেক করতে হবে।
- রডের লে-আউট সোজা ভাবে দেওয়া হয়েছে কিনা তা দেখে নিতে হবে।
ঢালাই কাজে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসমুহ
- মিক্সার মেশিন, বাইব্রেটর মেশিন + নজল, মেজারমেন্ট বক্স, সিলিন্ডার বক্স (8×4″), Slump cone, Water pump, খাবার যোগ্য পানি।
ঢালাই কাজের পূর্বে যে সকল যন্ত্রপাতিগুলো চেক করতে হবেঃ
- সকল মালামাল ও যন্ত্রপাতি পর্যাপ্ত পরিমান মজুত আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় সংখ্যক লেবার ও মিস্ত্রি মজুত আছে কিনা সে বিষয়ে নজর দিতে হবে।
- ভাইব্রেটরের অপারেটর উপস্থিতি এবং মিক্সার ও ভাইব্রেটর মেশিন সচল আছে কিনা তা চেক করে নিতে হবে।
- মেশিনের তেল, মবিল পর্যাপ্ত পরিমান আছে কিনা তা চেক করতে হবে।
- যদি রাতে কাজ করতে হয় তাহলে পর্যাপ্ত পরিমান আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- কনসিল কোন পাইপ দেওয়ার প্রয়োজন হলে তা দেওয়া আছে কিনা দেখে হবে।
- ইলেকট্রিক কাজে পাইপের ব্যবহার ছাড়া পড়েছে কিনা তার প্রতি দৃষ্টি নিতে হবে।
- সকল প্রকার ধুলা-বালু, ময়লা ও আবর্জনা পরিস্কার করে নিতে হবে।
- সকল প্রকার কাজের রিপিয়ার মিস্ত্রি রয়েছে কিনা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি সু-দৃষ্টি রাখতে হবে।
ঢালাই চলাকালীন করনীয়ঃ
- ল্যাবে কংক্রিটের কার্যোপযোগিতা পরীক্ষার জন্য তিনটি সিলিন্ডার ভরতে হবে।
- ঢালাই চলাকালিন সময়ে সাটারিং ও ব্লগ চেক করার জন্য দুইজন মিস্ত্রি প্রস্তুত রাখতে হবে।
- কংক্রিট ঢালাই এর মসলা ৫ ফুটের উপর থেকে ফেলা যাবে না।
- যথাযথ ভাবে ভাইব্রেটর করতে হবে।
- কংক্রিট এর লেভেল এবং সারফেসের ফিনিশিং সমান্তরাল হতে হবে।
ঢালাই এর পরবর্তী লক্ষণীয় এবং করণীয়ঃ
- নির্দীষ্ট সময় পর্যন্ত কিউরিং করতে হবে।
- নির্ধারিত সময়ের পূর্বে সাটার খোলা যাবে না ।
- সাটার খোলার সময় নিয়ম মাফিক খুলতে হবে।
- কংক্রিট সার্ফেসের ফিনিশিং ভাল হতে হবে।
- সিলিন্ডার টেস্টের রিপোর্ট যথোপযুক্ত না আসলে স্ট্রাকচার ভেঙ্গে নতুন করে করতে হবে।
বিঃ দ্রঃ ঢালাই এর পরের দিন বা কয়েক ঘন্টা পরে সিমেন্ট গ্রাউটিং এর পানি পুরা সারফেসের উপর ছিটিয়ে দিয়ে ছালার বস্তা দিয়ে টেনে দিতে হবে এতে ঢালাই ফেটে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
উপরের পোস্ট পড়ে আশাকরি আপনি সঠিক গাইডলাইন পাবেন। যদি কোন কিছু বুঝতে অসুবিধা হয় তা হলে যোগাযোগ আমাদের সাথে ইনসাফ বিল্ডিং ডিজাইন কনসালটেন্ট লিমিটেড সবসময় আপনার পাশে আপনার স্বপ্ন বিনির্মাণে। সবশেষে “সঠিক নিয়মে করি ভবন নির্মাণ পরিকল্পিত নগরায়নে রাখি অবধান”