Blog

বাড়ি নির্মাণ করার পূর্বে করণীয়

বাড়ি নির্মাণ করার পূর্বে করণীয়

বাড়ি নির্মাণ করার পূর্বে করণীয়ঃ

বাড়ি নির্মাণ করার পূর্বে করণীয়ঃ বাসস্থান আমাদের তৃতীয় মৌলিক চাহিদা। নিজের এক খন্ড জমিতে সবাই চায় নিজের মতো করে সুন্দর একটি বাড়ি নির্মাণ করতে। তবে মাঝে মাঝে আমাদের সঠিক সিদ্ধান্তহীনতার জন্য অনভিজ্ঞ মানুষের কথা অনুসরণ করে ইমারত তৈরী করি। যার কারনে বাড়ি তৈরীর পরবর্তীতে দেখা যায় বিভিন্ন স্থানে প্লাস্টার বা ওয়ালে ফাটল ধরা, মেঝে উঁচু-নিচু হয়ে যাওয়া। এই করনে বাড়িটি তার সৌন্দর্য হারিয়ে কিম্ভুত কিমাকার রূপ ধারন করে। আর এই বিল্ডিং তৈরিতে ব্যয় করতে হয় অতিরিক অর্থ ও সময়। তাই আমাদের মনে রাখা উচিত- সঠিক কাজ, সঠিক মানুষ দারা পরিচালনা।

নতুন বিল্ডিং বা কাঠামো নির্মাণ করার ক্ষেত্রে করণীয়

১) যে কোন বিল্ডিং-এর নকশা তৈরি করার পূর্বেই স্ট্রাকচারাল নকশার বিধিগুলোর অনুসরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে সঠিক স্ট্রাকচারাল নকশা না হলে ভূমিকম্প প্রতিরোধক বিল্ডিং হবে না।

২) বিল্ডিং ডিজাইনের আগেই অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা মাটির গুনাগুণ বিশ্লেষণ ও মাটির ধারণ ক্ষমতা নির্ভুলভাবে নির্ণয়পূর্বক রিপোর্ট তৈরি করতে হবে।

৩) বিল্ডিং নির্মাণের সময় অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের (সিভিল ইঞ্জিনিয়ার) তদারকি রাখতে হবে যাতে গুণগত মান ঠিক থাকে।

৪) সঠিক অনুপাতে গুনগতমানের সিমেন্ট, রড, বালির ব্যবহার হচ্ছে কিনা দেখতে হবে। কংক্রিটের চাপ বহন ক্ষমতা কোনো অবস্থাতেই ৩০০০ psi – এর নিচে নামানো যাবেনা। তার জন্য সার্বক্ষণিক ভাবে নির্মাণাধীন সাইটে দায়িত্বে নিয়োজিত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদেরকে কিউব অথবা সিলিন্ডার টেস্ট করতে হবে। কংক্রিটের মিক্সাচারে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। ঢালাইর পরে পানির ব্যবহার করে কংক্রিটের কিউরিং করতে হবে।

ডিজাইন ও কনস্ট্রাকশন কাজ করার পূর্বে নিচের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো সামনে রাখতে হবেঃ

১) উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রড পরীক্ষাপুর্বক ব্যবহার করতে হবে। রডের বহন ক্ষমতা ৬০ হাজার psi -এর কাছাকাছি থাকতে হবে। স্ক্রাপ বা গার্বেজ থেকে প্রস্তুতকৃত রড ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।

২) বিল্ডিং-এর প্ল্যান ও এলিডেশান দুই দিকই সামাজ্য থাকতে হবে।

৩) নির্ধারিত ডিজাইনের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত ফ্লোর নির্মাণ করবেন না। বিল্ডিং কোড অনুসারে এক্সপানশান ফাঁক রাখতে হবে।

৪) বেশি পরিমান সরু ও উঁচু বিল্ডিং- এর পাশ হঠাৎ করে কমাবেন না। যদি কমাতে হয় তাহলে ত্রিমাত্রিক ডাইনামিক বিশ্লেষণ করে ডিজাইন করতে হবে।

৫) বিল্ডিং-এর উচ্চতা যদি ভবনের প্রস্থের ৪ (চার) গুণের অধিক হয় তাহলে ত্রিমাত্রিক ডাইমানশন বিশ্লেষণ করে ডিজাইন করতে হবে।

৬) সেটব্যাক বা হঠাৎ করে বিল্ডিং-এর পাশের মাপঝোক কমানো যাবেনা। যদি কমাতেই হয় তাহলে ত্রিমাত্রিক বিশ্লেষণ করে সাইট অ্যাফেক্ট জেনে ডিজাইন করতে হবে।

৭) জটিল কাঠামোগত প্লানের জন্য অবশ্যই ত্রিমাত্রিক ভূমিকম্প বিশ্লেষণ করে ডিজাইন করতে হবে।

৮) শেয়ার ওয়াল বা কংক্রিটের দেয়াল সঠিক স্থানে বসিয়ে ভূমিকম্পরোধ শক্তির পরিমাণ বাড়াতে হবে।

৯) সাম্প্রতিক সময়ে যে হারে বিম ছাড়া কলাম ও স্ল্যাব বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে, তা মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প হলেই ধ্বসে যাবে। সুতরাং বিম, কলাম ও স্ল্যাব বিশিষ্ট বিল্ডিং তৈরি করতে হবে।

১০) দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ারকে বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে বিল্ডিং- এর প্ল্যান/ ডিজাইন করে ভূমিকম্প রোধক বিল্ডিং নির্মাণ করতে হবে।

১১) নিচের তলা পার্কিং-এর জন্য খালি রাখতে হলে, ঐ তলার পিলারগুলো। বিশেষভাবে ডিজাইন করতে হবে। প্রয়োজনমতো কংক্রিটের দেওয়াল দিয়ে পিলারগুলোতে বেষ্টনীবদ্ধ করতে হবে।

(১২) বিল্ডিং-এর বিমের থেকে পিলারের শক্তি বেশি করে ডিজাইন করতে হবে। কমপক্ষে ২০% বেশি করতে হবে।

১৩) মাটির গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে যথাযথ ফাউন্ডেশন প্রকৌশলগত ভাবে যাচাই বাছাই করে ডিজাইন করতে হবে।

১৪) ৫ ইঞ্চি ইটের দেয়ালগুলো ভূমিকম্পের জন্য আদৌ নিরাপদ নয়। তাই এই দেয়ালগুলো ছিদ্রযুক্ত ইটের ভিতরে চিকন রড দিয়ে আড়াআড়ি ও লম্বা লম্বি ভাবে তৈরি করে লিন্টেলের সাথে যুক্ত করে দিতে হবে। সবদিকে লিন্টেল দিতে হবে। বিশেষ করে দরজা বা জানালার খোলা জায়গায় চিকন রড দিয়ে ৫ ইঞ্চি ইটের দেয়াল যুক্ত করতে হবে।

১৫) মনে রাখতে হবে, নতুন বিল্ডিং নির্মাণে ভূমিকম্প-প্রতিরোধক নিয়মাবলি প্রয়োগ করলে, শুধুমাত্র ২-৩% নির্মাণ খরচ বৃদ্ধি পায়।

জেনে নেই বাড়ি তৈরীর পূর্ব কার্যক্রমের ধাপ গুলিঃ

১) ভালো স্থপতি দিয়ে বাড়ির প্লান করিয়ে নিন। মনে রাখবেন জমি যত ছোট হোক আর বাকা তেরা হোক। একজন ভালো স্থপতি এই সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারবেন। জমির প্রতি অংশের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেন। এ ছাড়াও স্থপতিকে দিয়ে বাড়ির ফার্ণিচার প্লান ও ইনটেরিওর ডেকোরেশন প্লান করিয়ে নিতে পারেন।

২) প্লানিং করুন। পুরো বাড়ি একবারে করবেন নাকি দুই তলা করে পরে বাকি চার তলা করবেন। গ্যারেজ কার পার্কিং কয়টি রাখবেন। বাড়িটির অকুপেন্সি কেমন হবে আবাসিক হবে নাকি কমার্শিয়াল হবে, লিফট, জেনারেটর, সাব স্টেশনের প্রভিশন রাখবেন কি রাখবেন না, ছাদে বাগান হবে কিনা, আশে-পাশে ভবিষ্যতে কি রকমের ইমারত নির্মিত হতে পারে।

৩) প্রথমেই ফাইনান্স এর কথা ভাবুন। অর্থাৎ হাতে কত টাকা আছে পরে কোথা হতে আসবে তা নিশ্চিত করুন। এর জন্য দরকার প্রিলিমিনারী এস্টিমেশন। এর জন্য অভিজ্ঞ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের কাছে যান।

৪) সয়েল টেষ্ট করতে ভুলবেন না। হুট করে পাইলিং-এ যাবেন না। সয়েল টেষ্ট রিপোর্ট নিয়ে অভিজ্ঞ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের সাথে আলাপ করুন।

৫) বিল্ডিং-এর স্ট্যাকচারাল ডিজাইনের জন্য অভিজ্ঞ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের কাছে যান। ভূমিকম্প নিয়ে ইদানিং সবাই বেশি চিন্তিত। স্ট্যাকচারাল সিসমিক লোডের জন্য ডিজাইন করা যায়।

৬) প্লাম্বিং এবং ইলেক্ট্রিক্যাল ডিজাইন অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা করে নিন। মনে রাখবেন বাড়ি তৈরির পর প্রাথমিক সমস্যা গুলো প্লাম্বিং এবং ইলেক্ট্রিক ওয়ারিং এ দেখা যায়। ফলে দেখা যায় ভাঙচুর করতে হচ্ছে বা প্রতিদিন একটি বিরক্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। যা বাড়ি তৈরীর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৭) ডিটেইল বিল অফ কোয়ান্টিটি বা বি ও কিউ তৈরী করুন এবং আপনার পূর্বের আনুমানিক ব্যায়ের সাথে তুলনা করুন। যদি ব্যয় বেড়ে যায় তবে ডিজাইন বা

প্লানে কিছু পরিবর্তন এনে ব্যয় কমাতে পারেন।

৮) কনস্ট্রাকশন-এ শুধু মাত্র কন্ট্রাকটরের উপর নির্ভরশীল না হয়ে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে ফুল টাইম অথবা পার্ট টাইম সুপারভিশনে রাখুন।

বিঃদ্রঃ মনে রাখবেন বাড়ি তৈরীর জন্য সঠিক প্লানিং আর ডিজাইন না করলে পরবর্তীতে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। তাই উপযুক্ত প্রফেশনালদের সাথে আলাপ করে বাড়ি তৈরির কাজে হাত দেবেন। এতে আপনি বিল্ডিং তৈরিতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হতে রক্ষা পাবেন এবং নিরাপদ থাকবেন।

আলো-বাতাসের ব্যবস্থাঃ
  • আলো বাতাসের প্রবেশের জন্য কমপক্ষে নিচের মত খোলা দেয়াল থাকতে হবে।
  • গরম আবহাওয়াতে মেঝের দশ ভাগের এক ভাগ পরিমাণ ।
  • ভেজা গরম আবহাওয়াতে মেঝের ছয় ভাগের এক ভাগ ।
  • সাধারণ আবহাওয়াতে মেঝের আট ভাগের এক ভাগ।

আমরা আশাকরি আপনি যদি উল্লেখিত বিষয় সঠিক ভাবে মেনে বাড়ি নির্মাণ করেন তা হলে আপনি বিল্ডিং তৈরিতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হতে রক্ষা পাবেন এবং নিরাপদ থাকবেন। বাড়ি নির্মাণের যেকোনো সমস্যার সমাধান নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। ইনসাফ বিল্ডিং ডিজাইন এন্ড কনসালটেন্ট লিমিটেড।

বাড়ি নির্মাণ করার পূর্বে করণীয় Read More »

পাইলিং কি? কেন করা হয়? কী ভাবে করা হয়?

পাইল/পাইলিং কি? কেন করা হয়? কী ভাবে করা হয়? পাইলিং কাজ চলা অবস্থায় কি কি মালামাল প্রয়োজন?

পাইল কাকে বলে?

পাইলঃ মাটির ভার বহন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অথবা বিল্ডিং এর সমস্ত লোড মাটির গভীরে পৌঁছানোর জন্য ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মাটির গভীর পর্যন্ত যে আর. সি.সি. মেম্বার তৈরি করা হয় তাকে পাইল বলে।

কী ভাবে পাইলের লে-আউট দেওয়া হয়?

বিল্ডিং এর সমস্ত গ্রিড লাইনের লে-আউট দেওয়ার কাজ শেষ হয়ে গেলে পাইল লে-আউট দিতে হবে। গ্রিড লাইনকে রেফারেন্স লাইন ধরতে হবে এবং এর ভিত্তিতে পাইলের পয়েন্ট দিতে হবে। লোকজনের চলাফেরা এবং রিক মেশিন সরানো-নড়ানোর কারনে পয়েন্ট গুলো যেন হারিয়ে না যায় তার জন্য পাইল পয়েন্টের সেন্টারে ১০ মিমি রডের টুকরা উলম্ব ভাবে ঢুকিয়ে দিয়ে ঢালাই করে দিতে হবে। তার পারেও মেশিনের আঘাতে পয়েন্ট ভেঙ্গে যায়, মাটির তলে পরে যায় যা পরে খুজে বের করতে অনেক ভুগান্তিতে পড়তে হয়। তাই বোরিং শুরু করার আগে সিমেন্টের খালি বস্তায় বালি ভরে পত্যেকটা পাইল পয়েন্টের উপর রাখতে হবে। এতে পাইল পয়েন্ট গুলো সহজে খুজে বের করা যাবে।

লে-আউট এর উপাদান সমূহ কি কি?

সুতা, তারকাটা, খুটি, স্টীল টেপ, ফিতা টেপ, হলুদ বা লাল এনামেল রং, হাতুরী ছোট বড়, ডিজাইন রাখার টেবিল, চেয়ার, মিস্ত্রী, হেলপার, ওয়াটার লেভেল পাইপ, ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হবে।

অনেক জায়গায় বিল্ডিং করার জন্য পাইলিং এর কাজ করতে দেখি কিন্তু কি এই পাইলিং? এবং কেনইবা এ পাইলিং ব্যবহার করা হয়?

পাইলিং করার কারনঃ পাইলিং হল মূলত মাটির নীচে গভীর কলাম বা পাঠাতন, যা মূলত ম্যাট বা রাফট কিংবা কম্বাইন ফাউন্ডেশন এর তলের অথবা কলামের ভিত্তির বেজ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। যে সকল স্থানের মাটি সঠিক গঠনের নয় বিধায় সাধারন ফাউন্ডেশন দুর্বল হবে, সে সকল স্থানে পাইলিং করে বিল্ডিং করা হয়।

পাইলিং ব্যবহার করার কারন গুলো কী?

১) ভবনের লোড বহনকারী হিসেবে।
২) মাটি যাতে ভবনের চাপে সরে বা ক্ষয় হয়ে না যায়।
৩) ঘূর্ণয়মান মোমেন্ট এবং তীর্যক বলকে প্রতিরোধ করতে।
৪) বালি মাটির ভার বহন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে।
৫) ব্রীজ, কালবার্ট, ডক, পায়ার, ও বিভিন্ন মেরিন কাঠামো তৈরীতে।
৬) ভবনের লোডকে নরম বা সংকোচনশীল পদার্থের মধ্য দিয়ে মাটির শক্ত স্তর পৌঁছে দিতে।

পাইলিং কাজ পরিচালনা করার জন্য কি কি যন্ত্রপাতি ও মালামাল প্রয়োজন?

ক্যাকুলেটর, খাতা, কলম = সাইটে আগত সমস্ত মালামাল এবং কোন কাজে কি পরিমান পাথর বালি ব্যয় হচ্ছে তার হিসাব পুংখানুপুংখ ভাবে খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে।

পাইলিং কাজ চলা অবস্থায় কি কি মালামাল প্রয়োজন?

    • ভিটি বালি = পাইলিং কাজ চলাবস্থায় মিস্ত্রীদের পায়ের নিচের কাঁদা দুর করার জন্য ভিটি বালি ব্যবহার করা হয়।
    • ৩/৪” পাথর = পাইলিং কাজে সচরাচার সিঙ্গেল পাথর অথবা কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা অনুযায়ী ভূতভাঙ্গা বা বোল্ডার ভাঙ্গা পাথর ব্যবহার করা হয়।
    • লোকাল বালি ও সিলেট বালি = ফাইন এ্যাগ্রিগেইটহিসাবে ১০০% সিলেট বালি বা ৫০% সিলেট বালি ও ৫০% লোকাল বালি ব্যবহার করা হয়।
    • এম. এস. রড = পাইলের খাঁচা তৈরিতে খাড়া রড কম পক্ষে ৬ টা এবং রডের ডায়া কম পক্ষে ১২ মিমি বা ১৬ মিমি ব্যবহার করতে হবে। স্পাইরাল তৈরিতে ৮ মিমি থেকে ১০ মিমি বা বড় বড় কাজে ১২ মিমি ডায়া রডও ব্যবহার করা হয়।
    • সিমেন্ট = পাইলিং কাজে সাধারন সিমেন্ট ব্যবহার করা যায় তবে মাটি ও পানির নিচে হওয়ার কারনে বা দ্রুত জমাট বদ্ধ করার জন্য OPC সিমেন্ট ব্যবহার করাই ভাল।
    • মেজারিং টেপ = সাইটে বিভিন্ন জরিপ কাজ করার জন্য মেজারমেন্ট টেপ ব্যবহার করা হয়। সাধারনত ১০ ফুট, ১৬ ফুট ও ১০০ ফুটের টেপ ব্যবহার করা হয়।
    • ওয়াটার লেভেল = রিফারেন্স পিলারের উচ্চতার সাপেক্ষে সকল পাইলের কাট-অপ লেভেল একই উচ্চতায় রাখার জন্য ওয়াটার লেভেল করা হয়। পাইলিং কাজ সঠিক ভাবে করার জন্য অবশ্যই বাড়ির পি.এল লেভেল চিহ্নিত করতে হবে এবং সে অনুযায়ী পাইলের কাট অপ লেভেল ঠিক করতে হবে।
    • ভেন্ট্রোনাইট = অনেক সময় বোরিং এর চারপাশের মাটি ভেঙ্গে ক্যাভিন হয়ে যায় আর এটা প্রতিরোধ করার জন্য ভেন্ট্রোনাইট, গবর বা লালমাটি পানির সাথে গুলিয়ে পানির ঘনত্ব বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
    • ঘামবুট, হেলমেট ও সেফটি পোশাক = রিক মেশিনের রশ্মি এবং বোরিং পাইপ আটকানোর জন্য নাট-বোল্ট ব্যবহার করা হয়। বোরিং কাজ চলা অবস্থায় দেখা যায় এই নাট-বোল্ট খুলে ছিটকে দূরে গিয়ে পরে। যদি কারোর মাথায় বা শরিরের কোন অংশের উপর পরে তাহলে শরীরের সে অংশ পঙ্গু বা বিকলঙ্গ হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া মৃত্যুর মত ভয়ানক দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই সাইট চলা অবস্থায় সেফটি ব্যবহার করতে হবে।
    • সুতা = পাইলিং কাজ চলাবস্থায় যদি কখনও পাইল পয়েন্টগুলো হারিয়ে যায় তাহলে গ্রীড লাইনের দুপাশে সুতা বেধে দিয়ে খুজে বের করতে হবে। (গ্রীড লাইনের পয়েন্টগুলো লে- আউট দেওয়ার সময় রং দ্বারা দাগ দিয়ে তারকাটা মেরে চিহ্ন করে রাখা হয়)।

    পাইলিং কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও মেশিনঃ

    পাইলিং মেশিন/ pailing work

    পাইলিং মেশিন

    • রিক বা উইন্স মেশিন = খুব শক্তিশালী তিন বা চার স্যালেন্ডার মেশিন যার সাহায্যে চিজেল আপ-ডাউন করানোর মাধ্যমে বোরিং কাজ সম্পন্ন করা হয়। তাছাড়া বোরিং এর মধ্যে রডের খাঁচা, ট্রিমী পাইপ এবং ঢালাইয়ের মসলা নামানোসহ যাবতীয় কাজ এই মেশিনের সাহায্যে করা হয়।
    রিক বা উইন্স মেশিন

    রিক বা উইন্স মেশিন

    • এক-পায়া, দো-পায়া ও তে-পায়া = পাইলিং কাজ সাধারনত তে পায়া দ্বারাই করা হয় তবে জায়গার স্বল্পতার কারনে যেখানে তে-পায়া বসানো সম্ভাব হয় না সেখানে দো-পায়া বা এক-পায়ার দ্বারা করা হয়।
    এক-পায়া, দো-পায়া ও তে-পায়া পাইলিং সেট

    এক-পায়া, দো-পায়া ও তে-পায়া পাইলিং সেট

    • চিজেল = চিজেল এর চার কোনায় চারটা ও মাঝে একটা দেড়-দুই ফুট লম্বা মোট পাঁচটি ধারাল দাঁত থাকে এই দাঁতের গোড়ায় লোহার ব্লেড লাগানো থাকে যার ডায়া কাঙ্খিত পাইলের ডায়া থেকে ২” কম থাকে। যেমন ধরুন পাইল করতে হবে ২০” ডায়া এখন চিজেলের ডায়া দিতে হবে ১৮”। কারন চিজেল বোরিং এর মধ্যে দিয়ে আপ-ডাউন করার ফলে দু-পাশে ১” + ১” = ২” ডায়া বেড়ে যায়।
    • ক্যাসিং পাইপ = ৬-৭ ফুট বোরিং করার পর ক্যাসিং পাইপ সেন্টার বরাবর বসাতে হবে। ক্যাসিং পাইপের ডায়া পাইলের ডায়ার সমান হবে। চার-পাশের গলন মাটিকে ভেঙ্গে আসতে বাঁধা দেওয়া এবং বার বার পাইপ লাগান-খোলা, রডের জ্বালি নামানোর সুবিধা ছাড়াও ঢালাই বোরিং হোল এর মধ্যে প্রবেশ করানোর জন্য ট্রিমী পাইপ যুক্ত ফানেল ক্যাসিং পাইপের উপর বসানো হয়।
    • বোরিং পাইপ বা ড্রিলিং রড = চিজেলের সাথে বোরিং পাইপ একটার পর একটা জোড়া দিয়ে কাঙ্খিত গভীরতা পর্যন্ত বোরিং করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
    • পাম্প মেশিন = এই মেশিনের সাহায্যে পানি ২” লুস পাইপ ও বোরিং পাইপের ভেতর দিয়ে চিজেলের মাথায় অর্থাৎ বোরিং গর্তের নিচে স্ব-জোড়ে আঘাত করা হয়। ফলে গর্ভের নিচের মাটি কাদা হয়ে পানিতে ভেসে উপরে উঠে আসে।
    • ট্রিমি পাইপ = ট্রিমী পাইপ বোরিং গর্তের ভেতরের কাদাকে সরিয়ে উপরের দিকে উঠিয়ে দিয়ে ঢালাইয়ের মসলাকে বোরিং গর্তের নিচে পৌঁছায়ে সফল ভাবে ঢালাই কাজ সম্পন্ন করতে সহায়তা করে।
    ট্রিমি পাইপ

    ট্রিমি পাইপ

    • মিক্সার মেশিন = এর দ্বারা মসলা তৈরি করা হয়। প্রথমে ৫০% বালি ও পাথর মিক্সার মেশিনের হপারের মধ্যে দিয়ে সিমেন্ট দিতে হবে এবং বাকি ৫০% বালি ও পাথর দিয়ে ২-৩ মিনিট ঘুড়ায়ে মশলা ভালভাবে মিক্সিং হয়ে গেলে ঢালতে হবে।
    • বাকেট = মিক্সার মেশিনের মসলা প্রথমে বাকেটে ঢালতে হয়।
    ক্যাসিং পাইপ ও বাকেট

    বাকেট ও ক্যাসিং পাইপ

    • ফানেল = বাকেটের মসলা ফানেলে ঢালা হয়। অর্থাৎ মিক্সার মেশিনের মসলা ফানেলে পৌছানোর জন্য বাকেট বহক হিসাবে কাজ করে।
    • পানির ড্রাম = পাইল কাস্টিং করা অবস্থায় হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে। সে কারনেই ঢালাই কাজে ব্যবহার করার প্রয়োজনে কিছু পরিমান পানি ড্রামে মজুদ করে রাখা হয়।
    • ১ হর্স মটর-পাম্প = পাইল বোরিং ও কাস্টিংসহ অনেক কাজে পানি ব্যবহার করার হয়। বড় সাইট হলে ১টা মটর স্টোকে রাখতে হবে। সেই সাথে পানি বহনের জন্য ইন্সিত দৈর্ঘ্যের লুস পাইপ নিতে হবে।
    • মাট পাম্প = বৃষ্টি বাদলের দিন হলে সাইট থেকে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য ২ হর্সের একটা মাট পাম্প এবং সাথে ২” প্রয়োজনীয় দৈর্ঘ্যের লুস পাইপ নিতে হবে। এছাড়া বেজ, সেপটিক ট্যাংক, সোকয়েল ও ওয়াটার রিজার্ভারের মাটি কাটার সময় অধিক পরিমান পানির চাপকে প্রতিরোধ করার জন্য মাট পাম্প ব্যবহার করা হয়।
    • ওয়েন্ডিং মেশিন = রডের খাঁচার খাড়া রডের সাথে স্পাইরাল রড ওয়েন্ডিং করে দেওয়ার জন্য ওয়েল্ডিং মেশিন ব্যবহার করা হয়।
    • গ্রান্ডিং মেশিন = রড কাটার জন্য গ্রান্ডিং মেশিন ব্যবহার করা হয়।

    পাইলিং শুরুর পূর্বে করনীয় কী কী?

    • চিজেলের ডায়াঃ চিজেলের ডায়া পাইলের ডায়া থেকে ২” কম হতে হবে সে অনুযায়ী ঠিক আছে কিনা তা চেক করে নিতে হবে।
    • বোরিং পাইপের দৈর্ঘ্যঃ বোরিং পাইপের দৈর্ঘ্য পাইলের গভীরতার সমান বা বড় আছে কিনা তা চেক করে নিতে হবে।
    • টিমী পাইপের দৈর্ঘ্যঃ পাইলের দৈর্ঘ্যের চেয়ে টিমী পাইপের দৈর্ঘ্য ৬’-৯” ছোট রাখা হয় বা রডের খাঁচার দৈঘ্যেরে চেয়ে ৩” বড় রাখা হয় যেন পাইলের ক্লিয়ার কভার বজায় থাকে।
    • পাইলের পয়েন্ট সেন্টার করাঃ প্রথমে তে-পায়া দাড় করাতে হবে, তারপর চিজেল উঠিয়ে পাইলের পয়েন্ট ও চিজেলের মাঝখানের দাঁত একই লেভেলে আনতে হবে এবং চিজেলের মাঝখানের দাঁতে পানি দিয়ে দেখতে হবে। পানি পাইল পয়েন্টের ঠিক রডের মাথার উপর পড়ে কিনা। যদি রডের মাথার উপর পানি পড়ে তাহলে পাইলিং করার অনুমতি দিতে হবে।
    • বোরিং ওয়াশ করাঃ কমপক্ষে আধা ঘন্টা বোরিং ওয়াশ করতে হবে। তবে যতক্ষন পার্যন্ত ময়লা পানি বের হয় ততক্ষন পর্যন্ত ওয়াশ করতে হবে। ওয়াশ করার জন্য অবশ্যই পরিষ্কার পানি ব্যবহার করতে হবে।
    • রডের খাঁচা তৈরি এবং ভাল ভাবে ওয়েন্ডিং করাঃ ড্রয়িং অনুযায়ী রডের খাঁচা তৈরি করে নিতে হবে। খাঁচার সাথে অবশ্যই কনক্রিটের তৈরি হুইলাকৃতির ব্লগ বা ১০মিমি রড দিয়ে। চেয়ার লাগাতে হবে। চেয়ারের গায়ে কস্টেপ পেচিয়ে দিতে হবে যাতে মরিচা না ধরে। খাঁচার মেইন রড এবং বাইন্ডার রড এর প্রত্যেকটা পয়েন্ট একটার পর একটা ভাল ভাবে ওয়েন্ডিং করতে হবে। অর্থাৎ একটা পয়েন্ট গুনা তার দিয়ে এবং পরের পয়েন্ট ওয়েল্ডিং করতে হবে।
    দুটি খাঁচা এক সাথে ওয়েল্ডিং করার দৃশ্য

    দুটি খাঁচা এক সাথে ওয়েল্ডিং করার দৃশ্য

    • কাস্টিং করাঃ বোরিং ওয়াশ করা হয়ে গেলে রডের খাঁচা বোরিং এর মধ্যে ঢুকাতে হবে। কাট-অফ লেভেল ঠিক রাখার জন্য খাঁচার মাথায় রডের হুক তৈরি করে ক্যাসিং পাইপের সাথে লাগিয়ে দিতে হবে। ট্রিমী পাইপ ঢুকানোর পর ঢালাইয়ের কাজ শুরু করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে ট্রিমী পাইপ এর নিচের মাথা যেন ঢালাইয়ের ভেতর থেকে বের হয়ে না আসে। কারন ঢালাইয়ের ভেতর বের হয়ে আসলে ট্রিমি পাইপের মধ্যে কাদা ঢুকে যাবে ফলে পাইলিং এর কাঙ্খিত উদ্দেশ্য ব্যহত হবে।

    মিস্ত্রীরা তাদের সময় বাচানোর জন্য দুইটা ট্রিমী পাইপ এক সাথে খুলতে চায় এ ধরনের কাজ মারাত্তক ক্ষতিকর। ঢালাই শেষের দিকে আসলে ক্যাসিং পাইপ কাট-অফ লেভেল থেকে ৪-৫ ফুট উপরে উঠায়ে দিয়ে মসলা দ্বারা সম্পুর্ন ভরে দিয়ে অর্থাৎ ঢালাইয়ের মসলা চোখে দেখে ক্যাসিং পাইপ উঠিয়ে ফেলতে হবে।

    বি.দ্রঃ পাইলের মধ্যে যদি কাদা ঢোকে অথবা ফাঁকা থাকে তাহলে বিল্ডিং এর লোড পড়ার ফলে দেবে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এরুপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে লোড টেস্ট করে. নিতে হবে। অনেক সময় হুক ছুটে খাঁচা কাট-অফ লেভেলের নিচে নেমে যায়। এমন হলে মাটি কেটে পাইলের মাথা ভেঙ্গে রডের সাথে রড ওয়েন্ডিং করে পুনরায় ঢালাই করে তার উপর পাইল ক্যাপ করতে হবে।

    পাইলের মাথা ভাঙ্গার কারনঃ কাস্ট ইন সিটু পাইল এর ঢালাই এর পরে মাটি খুরে পুনরায় এর মাথা ১মিটার ভাঙ্গা হয় । মুলত দুটি কারনে পাইল এর মাথা ভাঙ্গা হয় ।
    • ক) পাইলের মাথা দুর্বল হওয়াঃ এটা বুঝতে হলে আপনাকে বুঝতে হবে পাইল কিভাবে চালাই করা হয়। পাইলের বোরিং বা গর্ত করার সময় খেয়াল করে দেখবেন পানির ব্যাবহার করা হয়। আর বোরিং পাইপে পানির ব্যবহারের কারনে নিচের মাটি আলগা হয়ে উপরে উঠে আসে ফলে গর্তের সৃস্টি হয়। এই গর্তের মধ্যে গোল রডের খাচা ঢুকিয়ে ঢালাই করা হয়।
    • ঢালাই চলা অবস্থায় ঘটে মজার একটা ঘটনাঃ গর্ভের নিচে কিছুটা কাঁদা জমে থাকে ফলে যখন ট্রিমী পাইপের মাধ্যমে কংক্রিট মসলা ঢালা হয় তখন কাদার চেয়ে কংক্রিট এর মশলা ওজনে ভাড়ী হওয়ার কারনে নিচে চলে যায় আর কাদা উপরে উঠে আসে। এভাবে আসতে আসতে সমস্ত কাদা একেবারে মাথায় উঠে আসে এবং সলিড কংক্রিট এর ঢালাই নিচে জমে শক্ত হয়ে যায় ।

    তাছাড়া টিমী পাইপ আপ-ডাউন করানোর ফলে মসলার ভেতরে কিছুটা কাদা ঢুকে যায় এবং ঢালাইয়ের উপরের অংশ থেকে সিমেন্ট ও বালির মসলা আলাদা হয়ে উপরে উঠে আসে। তাই মাথায় উঠে আসা কিছুটা কাদা কিছুটা কংক্রিট এর মিশ্রণ খুব একটা শক্তিশালি হয় না। সে কারনেই এই উপরের অংশটা ভেঙ্গে ফেলা হয়।

    খ) পাইল ক্যাপের রড বাধাঃ পাইল ক্যাপ তৈরি করা অর্থাৎ পাইলের মাথার সাথে পাইল ক্যাপ বা কলামের গোড়া শক্ত ভাবে আটকানোর জন্য পাইলের মাথার কিছু অংশ ভেঙ্গে রড বের করা হয়। পাইলের মাথার এই রডের সাথে পাইল ক্যাপ বা কলামের রডকে দৃঢ়ভাবে আটকানোর জন্য পাইল এর মাথার রডের প্রয়োজন হয়। একটি কলাম সাধারনত ১টি থেকে ১০ টিরও অধিক পাইলের সমন্বয়ে দারিয়ে থাকে। আর এ পাইলগুলোকে একটা কলামের সাথে বেধে রাখে পাইল ক্যাপ। এই ক্যাপ বাধার জন্য পাইলের মাথা ভাঙ্গা খুবই জরুরি।

    ইনসাফ বিল্ডিং ডিজাইন এন্ড কনসালটেন্ট লিমিটেড যেকোনো পাইলের কাজ করে থাকে তাই পাইলিং এর যেকোনো বিষয়ে পরামর্শ নিতে পারেন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম থেকে। কল করুন ০১৯৫৮১৪০৭৭০/০১৯৫৮-১৪০৭৭৪ নাম্বারে বা যোগাযোগ লিখার উপর ক্লিক করুন।

    পাইল/পাইলিং কি? কেন করা হয়? কী ভাবে করা হয়? পাইলিং কাজ চলা অবস্থায় কি কি মালামাল প্রয়োজন? Read More »

    Scroll to Top