বাড়ি নির্মাণ করার পূর্বে করণীয়

বাড়ি নির্মাণ করার পূর্বে করণীয়

বাড়ি নির্মাণ করার পূর্বে করণীয়ঃ

বাড়ি নির্মাণ করার পূর্বে করণীয়ঃ বাসস্থান আমাদের তৃতীয় মৌলিক চাহিদা। নিজের এক খন্ড জমিতে সবাই চায় নিজের মতো করে সুন্দর একটি বাড়ি নির্মাণ করতে। তবে মাঝে মাঝে আমাদের সঠিক সিদ্ধান্তহীনতার জন্য অনভিজ্ঞ মানুষের কথা অনুসরণ করে ইমারত তৈরী করি। যার কারনে বাড়ি তৈরীর পরবর্তীতে দেখা যায় বিভিন্ন স্থানে প্লাস্টার বা ওয়ালে ফাটল ধরা, মেঝে উঁচু-নিচু হয়ে যাওয়া। এই করনে বাড়িটি তার সৌন্দর্য হারিয়ে কিম্ভুত কিমাকার রূপ ধারন করে। আর এই বিল্ডিং তৈরিতে ব্যয় করতে হয় অতিরিক অর্থ ও সময়। তাই আমাদের মনে রাখা উচিত- সঠিক কাজ, সঠিক মানুষ দারা পরিচালনা।

নতুন বিল্ডিং বা কাঠামো নির্মাণ করার ক্ষেত্রে করণীয়

১) যে কোন বিল্ডিং-এর নকশা তৈরি করার পূর্বেই স্ট্রাকচারাল নকশার বিধিগুলোর অনুসরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে সঠিক স্ট্রাকচারাল নকশা না হলে ভূমিকম্প প্রতিরোধক বিল্ডিং হবে না।

২) বিল্ডিং ডিজাইনের আগেই অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা মাটির গুনাগুণ বিশ্লেষণ ও মাটির ধারণ ক্ষমতা নির্ভুলভাবে নির্ণয়পূর্বক রিপোর্ট তৈরি করতে হবে।

৩) বিল্ডিং নির্মাণের সময় অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের (সিভিল ইঞ্জিনিয়ার) তদারকি রাখতে হবে যাতে গুণগত মান ঠিক থাকে।

৪) সঠিক অনুপাতে গুনগতমানের সিমেন্ট, রড, বালির ব্যবহার হচ্ছে কিনা দেখতে হবে। কংক্রিটের চাপ বহন ক্ষমতা কোনো অবস্থাতেই ৩০০০ psi – এর নিচে নামানো যাবেনা। তার জন্য সার্বক্ষণিক ভাবে নির্মাণাধীন সাইটে দায়িত্বে নিয়োজিত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদেরকে কিউব অথবা সিলিন্ডার টেস্ট করতে হবে। কংক্রিটের মিক্সাচারে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। ঢালাইর পরে পানির ব্যবহার করে কংক্রিটের কিউরিং করতে হবে।

ডিজাইন ও কনস্ট্রাকশন কাজ করার পূর্বে নিচের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো সামনে রাখতে হবেঃ

১) উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রড পরীক্ষাপুর্বক ব্যবহার করতে হবে। রডের বহন ক্ষমতা ৬০ হাজার psi -এর কাছাকাছি থাকতে হবে। স্ক্রাপ বা গার্বেজ থেকে প্রস্তুতকৃত রড ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।

২) বিল্ডিং-এর প্ল্যান ও এলিডেশান দুই দিকই সামাজ্য থাকতে হবে।

৩) নির্ধারিত ডিজাইনের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত ফ্লোর নির্মাণ করবেন না। বিল্ডিং কোড অনুসারে এক্সপানশান ফাঁক রাখতে হবে।

৪) বেশি পরিমান সরু ও উঁচু বিল্ডিং- এর পাশ হঠাৎ করে কমাবেন না। যদি কমাতে হয় তাহলে ত্রিমাত্রিক ডাইনামিক বিশ্লেষণ করে ডিজাইন করতে হবে।

৫) বিল্ডিং-এর উচ্চতা যদি ভবনের প্রস্থের ৪ (চার) গুণের অধিক হয় তাহলে ত্রিমাত্রিক ডাইমানশন বিশ্লেষণ করে ডিজাইন করতে হবে।

৬) সেটব্যাক বা হঠাৎ করে বিল্ডিং-এর পাশের মাপঝোক কমানো যাবেনা। যদি কমাতেই হয় তাহলে ত্রিমাত্রিক বিশ্লেষণ করে সাইট অ্যাফেক্ট জেনে ডিজাইন করতে হবে।

৭) জটিল কাঠামোগত প্লানের জন্য অবশ্যই ত্রিমাত্রিক ভূমিকম্প বিশ্লেষণ করে ডিজাইন করতে হবে।

৮) শেয়ার ওয়াল বা কংক্রিটের দেয়াল সঠিক স্থানে বসিয়ে ভূমিকম্পরোধ শক্তির পরিমাণ বাড়াতে হবে।

৯) সাম্প্রতিক সময়ে যে হারে বিম ছাড়া কলাম ও স্ল্যাব বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে, তা মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প হলেই ধ্বসে যাবে। সুতরাং বিম, কলাম ও স্ল্যাব বিশিষ্ট বিল্ডিং তৈরি করতে হবে।

১০) দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ারকে বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে বিল্ডিং- এর প্ল্যান/ ডিজাইন করে ভূমিকম্প রোধক বিল্ডিং নির্মাণ করতে হবে।

১১) নিচের তলা পার্কিং-এর জন্য খালি রাখতে হলে, ঐ তলার পিলারগুলো। বিশেষভাবে ডিজাইন করতে হবে। প্রয়োজনমতো কংক্রিটের দেওয়াল দিয়ে পিলারগুলোতে বেষ্টনীবদ্ধ করতে হবে।

(১২) বিল্ডিং-এর বিমের থেকে পিলারের শক্তি বেশি করে ডিজাইন করতে হবে। কমপক্ষে ২০% বেশি করতে হবে।

১৩) মাটির গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে যথাযথ ফাউন্ডেশন প্রকৌশলগত ভাবে যাচাই বাছাই করে ডিজাইন করতে হবে।

১৪) ৫ ইঞ্চি ইটের দেয়ালগুলো ভূমিকম্পের জন্য আদৌ নিরাপদ নয়। তাই এই দেয়ালগুলো ছিদ্রযুক্ত ইটের ভিতরে চিকন রড দিয়ে আড়াআড়ি ও লম্বা লম্বি ভাবে তৈরি করে লিন্টেলের সাথে যুক্ত করে দিতে হবে। সবদিকে লিন্টেল দিতে হবে। বিশেষ করে দরজা বা জানালার খোলা জায়গায় চিকন রড দিয়ে ৫ ইঞ্চি ইটের দেয়াল যুক্ত করতে হবে।

১৫) মনে রাখতে হবে, নতুন বিল্ডিং নির্মাণে ভূমিকম্প-প্রতিরোধক নিয়মাবলি প্রয়োগ করলে, শুধুমাত্র ২-৩% নির্মাণ খরচ বৃদ্ধি পায়।

জেনে নেই বাড়ি তৈরীর পূর্ব কার্যক্রমের ধাপ গুলিঃ

১) ভালো স্থপতি দিয়ে বাড়ির প্লান করিয়ে নিন। মনে রাখবেন জমি যত ছোট হোক আর বাকা তেরা হোক। একজন ভালো স্থপতি এই সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারবেন। জমির প্রতি অংশের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেন। এ ছাড়াও স্থপতিকে দিয়ে বাড়ির ফার্ণিচার প্লান ও ইনটেরিওর ডেকোরেশন প্লান করিয়ে নিতে পারেন।

২) প্লানিং করুন। পুরো বাড়ি একবারে করবেন নাকি দুই তলা করে পরে বাকি চার তলা করবেন। গ্যারেজ কার পার্কিং কয়টি রাখবেন। বাড়িটির অকুপেন্সি কেমন হবে আবাসিক হবে নাকি কমার্শিয়াল হবে, লিফট, জেনারেটর, সাব স্টেশনের প্রভিশন রাখবেন কি রাখবেন না, ছাদে বাগান হবে কিনা, আশে-পাশে ভবিষ্যতে কি রকমের ইমারত নির্মিত হতে পারে।

৩) প্রথমেই ফাইনান্স এর কথা ভাবুন। অর্থাৎ হাতে কত টাকা আছে পরে কোথা হতে আসবে তা নিশ্চিত করুন। এর জন্য দরকার প্রিলিমিনারী এস্টিমেশন। এর জন্য অভিজ্ঞ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের কাছে যান।

৪) সয়েল টেষ্ট করতে ভুলবেন না। হুট করে পাইলিং-এ যাবেন না। সয়েল টেষ্ট রিপোর্ট নিয়ে অভিজ্ঞ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের সাথে আলাপ করুন।

৫) বিল্ডিং-এর স্ট্যাকচারাল ডিজাইনের জন্য অভিজ্ঞ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের কাছে যান। ভূমিকম্প নিয়ে ইদানিং সবাই বেশি চিন্তিত। স্ট্যাকচারাল সিসমিক লোডের জন্য ডিজাইন করা যায়।

৬) প্লাম্বিং এবং ইলেক্ট্রিক্যাল ডিজাইন অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা করে নিন। মনে রাখবেন বাড়ি তৈরির পর প্রাথমিক সমস্যা গুলো প্লাম্বিং এবং ইলেক্ট্রিক ওয়ারিং এ দেখা যায়। ফলে দেখা যায় ভাঙচুর করতে হচ্ছে বা প্রতিদিন একটি বিরক্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। যা বাড়ি তৈরীর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৭) ডিটেইল বিল অফ কোয়ান্টিটি বা বি ও কিউ তৈরী করুন এবং আপনার পূর্বের আনুমানিক ব্যায়ের সাথে তুলনা করুন। যদি ব্যয় বেড়ে যায় তবে ডিজাইন বা

প্লানে কিছু পরিবর্তন এনে ব্যয় কমাতে পারেন।

৮) কনস্ট্রাকশন-এ শুধু মাত্র কন্ট্রাকটরের উপর নির্ভরশীল না হয়ে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে ফুল টাইম অথবা পার্ট টাইম সুপারভিশনে রাখুন।

বিঃদ্রঃ মনে রাখবেন বাড়ি তৈরীর জন্য সঠিক প্লানিং আর ডিজাইন না করলে পরবর্তীতে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। তাই উপযুক্ত প্রফেশনালদের সাথে আলাপ করে বাড়ি তৈরির কাজে হাত দেবেন। এতে আপনি বিল্ডিং তৈরিতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হতে রক্ষা পাবেন এবং নিরাপদ থাকবেন।

আলো-বাতাসের ব্যবস্থাঃ
  • আলো বাতাসের প্রবেশের জন্য কমপক্ষে নিচের মত খোলা দেয়াল থাকতে হবে।
  • গরম আবহাওয়াতে মেঝের দশ ভাগের এক ভাগ পরিমাণ ।
  • ভেজা গরম আবহাওয়াতে মেঝের ছয় ভাগের এক ভাগ ।
  • সাধারণ আবহাওয়াতে মেঝের আট ভাগের এক ভাগ।

আমরা আশাকরি আপনি যদি উল্লেখিত বিষয় সঠিক ভাবে মেনে বাড়ি নির্মাণ করেন তা হলে আপনি বিল্ডিং তৈরিতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হতে রক্ষা পাবেন এবং নিরাপদ থাকবেন। বাড়ি নির্মাণের যেকোনো সমস্যার সমাধান নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। ইনসাফ বিল্ডিং ডিজাইন এন্ড কনসালটেন্ট লিমিটেড।

Scroll to Top